চা উৎপাদন মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলো গত কয়েক মাসের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, উৎপাদনের এ গতি ধরে রাখতে পারলে চলতি বছর চায়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
সরেজমিনে মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালে সারি সারি সবুজ চা গাছ। সেই বাগানজুড়ে নারী শ্রমিকেরা দল বেঁধে ব্যস্ত সময় পার করছেন দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি তুলতে। তবে কয়েক মাস আগেও জেলার ছোট-বড় ৯৩টি চা বাগানে এমন সবুজ সজীবতার চিত্র ছিল না। পর্যাপ্ত পাতা না থাকায় তখন নারী শ্রমিকদের নিরিখ পূরণ করাই হয়ে পড়েছিল কঠিন।
তবে মৌসুমের শেষের দিকে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও সহনীয় তাপমাত্রার কারণে চা উৎপাদনে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক সফলতা এসেছে। জেলার সব চা বাগান নতুন কচি পাতার সমারোহে ভরে উঠেছে। খুশি মনে শ্রমিকরা চা পাতা উত্তোলন করছেন।
শ্রীমঙ্গলের ফিনলে কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগানের একটি সেকশনের সর্দার উত্তম বাউরির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, দুই-তিন মাস আগে পাতার অভাবে তাদের কারখানা চালানো খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার কেজি চা পাতা উত্তোলন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তবে এখন প্রতিটি বাগান থেকে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেজি পাতা পাওয়া যাচ্ছে। নারী শ্রমিকেরা খুবই উৎসাহ নিয়ে প্রতিদিন পাতা উত্তোলন করছেন।
প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নারী চা শ্রমিক মিতালি, সুষ্মিতা ও কাজল জানান, প্রতিজন নিরিখ পূরণের পাশাপাশি একশো-দেড়শো কেজি পর্যন্ত পাতা উঠাতে পারছেন। কিছুদিন আগে সারাদিনেও তারা মাত্র ছয়-সাত কেজি পাতা তুলতে পারতেন। মূলত বৃষ্টির পানিতে চা গাছগুলো অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে এবং পাতার উৎপাদন বেড়েছে।
ক্লোনেল চা বাগানের ব্যবস্থাপক রনি ভৌমিক জানিয়েছেন, বাগান খরার ত্রাস কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এখন বাগানজুড়ে নতুন পাতার সমারোহ দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পাতা পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলো চায়ের উৎপাদন ক্ষতির ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। চা উৎপাদনের বাকি কয়েক মাসে এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে।
টি ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এস মুনির বলেন, চলতি বছর চা উৎপাদনের শুরু থেকেই খরার কারণে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। ঘাটতি কাটানো কষ্টকর হলেও বর্তমানে আবহাওয়া চায়ের জন্য অনুকূলে রয়েছে।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট শাখার চেয়ারম্যান জিএম শিবলী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে আবহাওয়া চা উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ অনুকূলে রয়েছে। তবে এখনও দেশের চা উৎপাদনে প্রায় দশ শতাংশ ঘাটতি আছে। যদি এ ধরনের আবহাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকে, তবে উৎপাদনের ঘাটতি পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যমতে, চলতি বছর দেশে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।