বিনোদন ডেস্ক : কানিজ সুবর্ণা। তারকা কণ্ঠশিল্পী। নব্বইয়ের দশকের শেষ প্রান্ত থেকে এক যুগেরও বেশি সময় গানে গানে আলোড়ন তুলে গেছেন তিনি। এরপর হঠাৎ আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। অবশেষে গানের ভুবনে ফিরে নতুন করে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি আশিক বন্ধুর কথা ও সুরে একটি একক গানের কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এ আয়োজন, আগামী দিনের পরিকল্পনা ও অন্যান্য বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে…
অনেক দিন পর নতুন কোনো গানে কণ্ঠ দিলেন। এখন থেকে আপনাকে নিয়মিত গাইতে দেখা যাবে কি?
বিরতি তো দুই বছর আগেই ভেঙেছি। মাঝের সময়টায় গানও রেকর্ড করেছি বেশ কিছু। সে হিসেবে অনেক দিন পর নতুন গান গাইলাম বলা যায় কি? যেতে পারে, কারণ গানের প্রকাশনায় আগের মতো সেই ধারাবাহিকতা তো ধারাবাহিক ছিল না; সে হিসেবে একটা তো গ্যাপ তৈরি হয়েছে বলা যায়। সে যা-ই হোক, গানে ফিরেছি এটাই আসল কথা। আর নিয়মিত প্রসঙ্গে যা জানতে চাইছেন, তা নিয়ে বলতে পারি, যখনই সুযোগ হবে গাইব। তবে গান গাওয়ার সিদ্ধান্তটা তখনই নেব, যখন কথা ও সুর ভালো লাগবে। এই যেমন দুদিন আগে রেকর্ড করলাম ‘জাদু করিয়া’ শিরোনামের একটি গান; যার কথা ও সুর দুটোই ভালো লেগেছে বলেই গাওয়া। আশিক বন্ধুর সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচয় ছিল। কিন্তু কখনও একসঙ্গে কাজ করা হয়ে উঠেনি। এই প্রথম তাঁর কথা ও সুরে গাইলাম। এর কথা ও সুর শুনে মনে হয়েছে, গানটি অনেকের ভালো লাগবে– তাই গাওয়ার বিষয়ে দ্বিতীয়বার ভাবিনি।
নতুন করে গানে ফেরার পর কী কী পরিবর্তন চোখে পড়ছে?
গানের ধরন, প্রকাশনা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বদলে গেছে। আগে অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পী, সুরকারদের সঙ্গে নানা ধরনের অ্যালবামের চুক্তি করতেন। অ্যালবাম মানেই এক মোড়কে অনেক গান, একক, দ্বৈত, মিশ্র– সব মিলিয়ে নানা ধরনের আয়োজন। তাই বছরজুড়ে চলত সেসব অ্যালবামের কাজ। কিন্তু এখন একটি করে গান প্রকাশ করা হয়। সেই গান প্রকাশের জন্য আবার আলাদা করে নির্মাণ করতে হয় মিউজিক ভিডিও। যেজন্য গান একই সঙ্গে শোনা ও দেখারও বিষয় হয়ে উঠেছে। একসময় যে সংগীতা, সাউন্ডটেকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল গানের প্রকাশনা ও বাণিজ্যিকীকরণ, এখন তা আর নেই। শিল্পী, সুরকাররা নিজেরাই এখন প্রযোজকের ভূমিকায় চলে এসেছেন। নিজ ইউটিউব চ্যানেলের পাশাপাশি বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোতেও গান প্রকাশ করছেন তারা। এমন আরও অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ছে, যা অল্পকথায় বলে শেষ করা যাবে না।
অনেক পরিবর্তনের মাঝে নিজের কাজগুলো কীভাবে উপস্থাপন করার কথা ভাবছেন?
সময়ের সঙ্গে চলতে চাই। আগে নিজের মুডে চলতাম। কিন্তু এখন চিন্তা-ভাবনা অনেক বদলে গেছে। এক সময় পপ-রক ও টেকনো সুরের গানকে প্রাধান্য দিয়েছি। ফোক তো একদমই গাইতে চাইতাম না। সেই মানসিকতাও আর নেই; বরং এখন চাইছি, যত ধরনের গান গাওয়া যায় তা গাইব। নির্দিষ্ট কোনো গণ্ডিতে নিজেকে আটকে রাখব না। সেই হিসেবে এখন আমাকে সুরকারনির্ভর শিল্পী বললেও ভুল হবে না। আগে কোন ধরনের গান দিয়ে অ্যালবাম সাজাব, তার পরিকল্পনা করেই সুরকার ও মিউজিশিয়ান নির্বাচন করতাম। এখন বিষয়টা সুরকার ও সংগীতায়োজকের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। তারা আমাকে দিয়ে কোন ধরনের গান গাওয়াতে চান, সেটা তারাই নির্বাচন করবেন। নিরীক্ষাধর্মী কিংবা নতুন সংগীতায়োজনে ফোকও গাওয়াতে পারেন। তবে মৌলিক গানের বিষয়ে শর্ত একটাই, কথা ও সুর ভালো ও সময়োপযোগী হতে হবে।
শুধু কি গান প্রকাশ করে যাবেন, নাকি স্টেজ শো, টিভি আয়োজনেও আপনার দেখা মিলবে?
শো নিয়ে অনেক দিন ধরেই ভাবছি। প্রস্তুতি চলছে। আসলে হয়েছে কী, আমার সঙ্গে যে মিউজিশিয়ানরা কাজ করতেন, তাদের মধ্যে দুজন পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। বেইজ গিটারিস্ট আর ড্রামার না থাকায় স্টেজ শোর সেটআপও ভেঙে গিয়েছিল। তাই মিউজিক সেটআপের জন্য সবকিছু নতুন করে গুছিয়ে নিতে হচ্ছে। তাই স্টেজ শোতে ফেরার জন্য আরেকটু সময় দরকার।
গানের ভুবনে এক যুগের বেশি সময় রাজত্ব করেছেন। আড়ালে চলে যাওয়ার পর পেছনের দিনগুলোর কথা মনে পড়েনি?
যখন যে কাজে ডুবে থাকি, তখন অন্য কিছু নিয়ে একদমই ভাবি না। গানের জগৎ থেকে যখন সরে গেছি, তখন পরিবার নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি সময় দারুণভাবে উপভোগ করেছি। তাই অতীতে কী ছিলাম, কী করেছি– এসব নিয়ে ভাবার অবকাশ ছিল না।
শেষমেশ কী ভেবে পারিবারিক বলয় থেকে বেরিয়ে এলেন?
ভক্ত-অনুরাগীদের কেউ জানেন কিনা জানি না, আমার দুই ছেলে আয়মান আহমেদ ও আজমান আহমেদ। অটিস্টিক হওয়ার কারণে তাদের ছেড়ে এ মুহূর্তে বাইরে থাকার সুযোগ ছিল না। আমিই ওদের পুরো পৃথিবী। ওদের বয়স এখন একজনের পনেরো পেরিয়েছে, একজনের চৌদ্দ। যার কারণে এখন বাইরে বেরুনোর কিছুটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই এতদিন যে পারিবারিক বলয়ে আটকে ছিলাম, সেখান থেকেও বেরিয়ে আসা সহজ হয়েছে। গান নিয়ে তাই নতুন করে ব্যস্ত হয়ে উঠতে পেরেছি।
পরবর্তী প্রজন্মের অনেকে গানের ধরন ও গায়কীর মুগ্ধতা নিয়েই সংগীতাঙ্গনে পা রেখেছেন। যাদের অনেকের আদর্শ আপনি, তাদের কথা কখনও মনে হয়নি?
শিল্পী হিসেবে এটা অন্যরকম ভালো লাগার যে, আমার গান শুনে, গায়কীতে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ শিল্পী হওয়ার বাসনা লালন করেছেন। এমন কিছু অনুরাগী আছে বলেই শিল্পীজীবন কিছুটা হলেও সার্থক হয়ে উঠেছে। তাদের সত্যি ভুলে থাকা কঠিন। তবে ভালো কাজে তাদের উৎসাহ দেওয়া ছাড়া আর কিবা করতে পারি।
এক সময় গানের পাশাপাশি মডেলিং ও অভিনয়ের প্রস্তাবও পেতেন। প্রস্তাব পেলেও এখন কী মডেলিং বা অভিনয় করবেন?
এর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সত্যি কঠিন। মজার বিষয় হলো, কদিন আগেও অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। নির্মাতা পরিচিতদের একজন। এজন্য তাঁকে কী জবাব দেব তা নিয়ে ভাবতে বসেছি। আসলে কিছু কাজ ইচ্ছা বা প্রস্তুতি ছাড়াই, হঠাৎ করেই হয়ে যায়। আমার কাছে মডেলিং ও অভিনয়ের বিষয়টিও এমনই। হয়তো কোনো একদিন হঠাৎ করেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যেতে পারি।