মৌলভীবাজারের শেরপুর বাজারের মূল রাস্তার ধার ঘেঁষা সেই একরও বেশি জমি। কয়েকদিন আগেই সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে যেটি দখলমুক্ত হয়েছিল, আজ সেখানে আবারও সরগরম নতুন এক “বাজার”—তবে সেটি বৈধ নয়, দখলবাণিজ্যের নতুন আসর।
দিন কয়েক আগেও এখানে ভাঙচুরের শব্দ, ভ্যানে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল টিনের চাল, কাঠের খুঁটি। মনে হচ্ছিল, অবশেষে দীর্ঘদিনের অবৈধ দখলের অবসান ঘটবে। স্থানীয়রা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু স্বস্তি যে কতটা ক্ষণস্থায়ী, তা বোঝা গেল খুব দ্রুতই।
এখন সেখানে দেখা মিলছে অন্য চিত্রের। বাঁশের খুঁটি পুঁতে ঝটপট নতুন দোকান তোলার তোড়জোড়। টিনের চালের ঘর গজিয়ে উঠছে চোখের পলকে। যেন উচ্ছেদ অভিযান কোনো নাটকীয় বিরতির পর আবার আগের দৃশ্যই ফিরিয়ে এনেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের একদল প্রভাবশালী দুষররা এই পুনর্দখল প্রক্রিয়ার আড়ালে থেকে সুবিধা নিচ্ছেন। একেকটি দোকানের জন্য হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। প্রশাসনের উপস্থিতি মিলিয়ে যেতেই শুরু হয়েছে এই গোপন বাণিজ্য।
রাস্তার পাশের পুরনো চায়ের দোকানে বসে এক প্রবীণ বাসিন্দা হতাশ গলায় বললেন, “সরকারি জমি উদ্ধার হলো ভেবে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে যদি আবার দখল হয়, তাহলে উচ্ছেদ অভিযান কি শুধু লোক দেখানো?”
শেরপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, শুধু অভিযান চালালেই হবে না, দরকার টেকসই নজরদারি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ। সওজের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা খবর পেয়েছি। আবারও ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে কাজটা সহজ নয়।”
সরকারি জমি উদ্ধারের পরও এই পুনর্দখলের কাহিনি কেবল শেরপুরের নয়, দেশের নানা জায়গায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। প্রশাসনের সাময়িক উপস্থিতির ফাঁক গলেই শুরু হয় অবৈধ দখলের নতুন অধ্যায়।
এ যেন সরকারি সম্পত্তির ওপর এক অনন্ত লুকোচুরি খেলা—যেখানে হারছে জনস্বার্থ, জিতে যাচ্ছে কেবল দখলদার আর তাদের গোপন বাণিজ্য।