Dhaka ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একটি সেতুর জন্য হাহাকার করছে বালাগঞ্জ-রাজনগরের মানুষ

একটা সময় কুশিয়ারা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রাচীন বাণিজ্যিক অঞ্চল ছিল বালাগঞ্জ, যেখানে ছিল জমজমাট নৌবন্দর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। এখন এই নদীতে ছোট-বড় নৌকা খুব কমই দেখা যায় এবং রাত ৯টার পর নদী পারাপারের জন্য কোনো নৌকাও থাকে না। কুশিয়ারা নদী সিলেট ও মৌলভীবাজারকে বিভক্ত করেছে। নদীর উত্তর দিকে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা আর দক্ষিণ দিকে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা। রাজনগরের পাঁচগাঁও, উত্তরভাগ, মুন্সিবাজার ও ফতেহপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত বালাগঞ্জকেন্দ্রিক। ফেঞ্চুগঞ্জ এবং শেরপুরের মাঝখানে প্রায় ৫০ কিলোমিটার নৌপথে কোনো সেতু নেই। কুশিয়ারার তীর ঘেঁষা বালাগঞ্জ বাজার এবং ওপারের রাজনগরের খেয়াঘাট বাজার—এই দুটি বাজারই সেতুর অভাবে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেতুর অভাবে নদীর দুই পারের ক্রেতা-বিক্রেতা, রোগী এবং তাদের স্বজনদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

উভয় এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর থেকে রাজনগরের খেয়াঘাট বাজারের দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। যাতায়াতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। অথচ কুশিয়ারা নদী পার হলেই বালাগঞ্জ, যেখান থেকে সিলেটে যাওয়া অনেক সহজ। এ কারণে দক্ষিণ পাশের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বালাগঞ্জের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরে নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কেবল আশ্বাসই দিয়েছে। কিন্তু কেউ প্রতিশ্রুতি রাখেনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনগরের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বালাগঞ্জ বাজারে অবস্থিত। নদী পারাপারের জন্য নৌকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। রাত একটু বেশি হলেই নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাদের সন্ধ্যা ৭-৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হয়। নৌকায় পণ্য পরিবহনেও ভোগান্তি ও ঝুঁকি রয়েছে। তাই সিলেট বা মৌলভীবাজার থেকে গাড়ি দিয়ে রাজনগরের মোকামবাজার, কালারবাজার ও খেয়াঘাটের বাজারসহ স্থানীয় হাটে পণ্য পৌঁছাতে অতিরিক্ত খরচ হয়। একটি সেতু থাকলে বালাগঞ্জ হয়ে সহজেই পণ্য আনা যেত।

বালাগঞ্জ পূর্ববাজার খেয়াঘাট এলাকার ব্যবসায়ী ম.আ মুহিত বলেন, কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতু না থাকায় এই দুই অঞ্চলের যোগাযোগ, শিক্ষা এবং অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে না। সার্বিক দিক থেকে পিছিয়ে আছে এই অঞ্চলটি। রাজনগরের বিলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও বালাগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সুধেন্দু দাশ অমল বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। বিশেষ করে বর্ষাকালে নৌকায় নদী পার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ। নদীর এপারে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। নদী পার হলেই বালাগঞ্জ সরকারি ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়, তয়বুন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বালাগঞ্জ সরকারি কলেজ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। কিন্তু জরুরি অবস্থায় মৌলভীবাজার যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে এবং সিলেটে যেতে হলে ফেঞ্চুগঞ্জ ঘুরে যেতে হয়।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ বলেন, এই প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেক সভায় আসেনি। তবে খেয়াঘাট-বালাগঞ্জ সেতু নির্মাণের জন্য হাইড্রলজি ও মারফোলজি স্টাডি শেষ হয়েছে। প্রস্তাবিত দুটি জায়গা আছে এবং ডিজাইনের কাজ চলছে। এছাড়া আরও কিছু ধাপ শেষ হলেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে।

Author

ট্যাগ :
জনপ্রিয় খবর
.copy_right_section { display: none; }

একটি সেতুর জন্য হাহাকার করছে বালাগঞ্জ-রাজনগরের মানুষ

আপডেটের সময়: ০৫:০২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একটা সময় কুশিয়ারা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রাচীন বাণিজ্যিক অঞ্চল ছিল বালাগঞ্জ, যেখানে ছিল জমজমাট নৌবন্দর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। এখন এই নদীতে ছোট-বড় নৌকা খুব কমই দেখা যায় এবং রাত ৯টার পর নদী পারাপারের জন্য কোনো নৌকাও থাকে না। কুশিয়ারা নদী সিলেট ও মৌলভীবাজারকে বিভক্ত করেছে। নদীর উত্তর দিকে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা আর দক্ষিণ দিকে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা। রাজনগরের পাঁচগাঁও, উত্তরভাগ, মুন্সিবাজার ও ফতেহপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত বালাগঞ্জকেন্দ্রিক। ফেঞ্চুগঞ্জ এবং শেরপুরের মাঝখানে প্রায় ৫০ কিলোমিটার নৌপথে কোনো সেতু নেই। কুশিয়ারার তীর ঘেঁষা বালাগঞ্জ বাজার এবং ওপারের রাজনগরের খেয়াঘাট বাজার—এই দুটি বাজারই সেতুর অভাবে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেতুর অভাবে নদীর দুই পারের ক্রেতা-বিক্রেতা, রোগী এবং তাদের স্বজনদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

উভয় এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর থেকে রাজনগরের খেয়াঘাট বাজারের দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। যাতায়াতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। অথচ কুশিয়ারা নদী পার হলেই বালাগঞ্জ, যেখান থেকে সিলেটে যাওয়া অনেক সহজ। এ কারণে দক্ষিণ পাশের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বালাগঞ্জের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরে নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কেবল আশ্বাসই দিয়েছে। কিন্তু কেউ প্রতিশ্রুতি রাখেনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনগরের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বালাগঞ্জ বাজারে অবস্থিত। নদী পারাপারের জন্য নৌকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। রাত একটু বেশি হলেই নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাদের সন্ধ্যা ৭-৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হয়। নৌকায় পণ্য পরিবহনেও ভোগান্তি ও ঝুঁকি রয়েছে। তাই সিলেট বা মৌলভীবাজার থেকে গাড়ি দিয়ে রাজনগরের মোকামবাজার, কালারবাজার ও খেয়াঘাটের বাজারসহ স্থানীয় হাটে পণ্য পৌঁছাতে অতিরিক্ত খরচ হয়। একটি সেতু থাকলে বালাগঞ্জ হয়ে সহজেই পণ্য আনা যেত।

বালাগঞ্জ পূর্ববাজার খেয়াঘাট এলাকার ব্যবসায়ী ম.আ মুহিত বলেন, কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতু না থাকায় এই দুই অঞ্চলের যোগাযোগ, শিক্ষা এবং অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে না। সার্বিক দিক থেকে পিছিয়ে আছে এই অঞ্চলটি। রাজনগরের বিলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও বালাগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সুধেন্দু দাশ অমল বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। বিশেষ করে বর্ষাকালে নৌকায় নদী পার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ। নদীর এপারে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। নদী পার হলেই বালাগঞ্জ সরকারি ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়, তয়বুন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বালাগঞ্জ সরকারি কলেজ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। কিন্তু জরুরি অবস্থায় মৌলভীবাজার যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে এবং সিলেটে যেতে হলে ফেঞ্চুগঞ্জ ঘুরে যেতে হয়।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ বলেন, এই প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেক সভায় আসেনি। তবে খেয়াঘাট-বালাগঞ্জ সেতু নির্মাণের জন্য হাইড্রলজি ও মারফোলজি স্টাডি শেষ হয়েছে। প্রস্তাবিত দুটি জায়গা আছে এবং ডিজাইনের কাজ চলছে। এছাড়া আরও কিছু ধাপ শেষ হলেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে।

Author