Dhaka ১২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্মারকগ্রন্থ ‘কালের অভিজ্ঞান’ ও প্রাসঙ্গিক কথা

  • শেখর আচার্য্য
  • আপডেটের সময়: ০৩:৩৭:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৫৫ নিউজ ভিউ

ব্রিটিশ শাসনামলের বৃহত্তর শ্রীহট্ট/সিলেট জেলার (বর্তমান সিলেট বিভাগ) নবীগঞ্জ থানার ৩৯নং সার্কেল পঞ্চায়েতের সহোদর সরপঞ্চ ও এক কালের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস স্মারক গ্রন্থ ‘কালের অভিজ্ঞান’ নামক বইটি গত ২৪.০৭.২০২৫ খ্রি. তারিখে আমার হস্তগত হয়েছে। উদীয়মান লেখক ও গবেষক শ্রীমান রত্নদীপ দাস রাজু’র ইচ্ছাতে বইয়ের উপর কিছু লিখার আপ্রান চেস্টা করলাম।

এখন আসা যাক মূল বিষয়ে, ‘কালের অভিজ্ঞান’ স্মারকগ্রন্থ টি সাড়ে তিন ফর্মার যার মোট পৃষ্ঠা চাপ্পান্ন (৫৬)। উন্নত মানের অপসেট কাগজে সাদা-কালো মানসম্মত ছাঁপা। হার্ড কাগজে বাঁধাই কভার, উন্নতমানের কাগজে চার রঙ্গা প্রচ্ছদ ছাঁপা। যা বইয়ের মান অনেক যেন বাড়িয়েছে। প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে স্থানীয় সরকার সার্কেল পঞ্চায়েতের একটি গোলটেবিল সভার প্রতীকি চিত্র। ভিতরে প্রথম কভার পাতায় দেওয়া হয়েছে প্রকাশকের কথা, লিখেছেন প্রকাশক অসীম সরকার। আর বইটি প্রকাশ করা হয়েছে গাঙুড় প্রকাশন, সিলেট থেকে। মূল্য রাখা হয়েছে বাংলাদেশে দুইশত টাকা, ভারতে একশত চল্লিশ রুপি, যুক্তরাজ্যে দুই পাউন্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে দুই ডলার। বইটি লন্ডনে পাওয়া যাবে সিলেট রিসার্চ এন্ড ট্রান্সলেশন সেন্টার (স্টোর) লন্ডন, ই২৯ এম এইচ ইংল্যান্ড, ইউকেতে। বাংলাদেশে পাওয়া যাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাস গ্রন্থাগার, গ্রাম: মুক্তাহার, ডাক: নবীগঞ্জ-৩৩৭০, উপজেলা: নবীগঞ্জ, জেলা: হবিগঞ্জ।

গ্রন্থের প্রথমে দেওয়া হয়েছে Form of Sanad শিরোনামে ১৮৭০ সালের বঙ্গীয় ৬ আইনের ৩ ধরা মতে সনদের পাঠ শিরোনামে ঐতিহাসিক একটি প্রামাণ্য নিয়োগ পত্রের কপি তুলে ধরা হয়েছে। সূচীপত্রের পরে আছে ভূমিকা। আর ভূমিকা লিখেছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় ভূমিকা উপস্থাপন করেছেন যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। ইহাতে বইটির মান সমৃদ্ধ হয়েছে। এরপর আছে সম্পাদকীয় কলাম। এটি লিখেছেন বাংলাদেশ তথা আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিক, আমাদের সিলেটের গর্ব, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মতিয়ার চৌধুরী ভাই। তিনি সম্পাদকীয়তে তুলে ধরেছেন তাঁর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের কথা। ইতিহাসের গভীর হারিয়ে যাওয়া টুকরো টুকরো মানিক কষ্ট করে সংগ্রহের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, নতুন প্রজন্মের কাছে এক ঐতিহাসিক দলিল স্মারকগ্রন্থ ‘কালের অভিজ্ঞান’, যা সত্যি এক প্রশংসনীয় মহৎ কাজ।

তারপর দেওয়া হয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ মূল্যবান পাঁচজন লেখকের পাঁচটি নিবন্ধ। প্রথম নিবন্ধ লিখেছেন সিলেটের স্বনামধন্য বহু গ্রন্থের লেখক, পাঠক ও গবেষক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শ্রীচৈতন্য গবেষণা কেন্দ্রের সম্পাদক প্রকৌশলী শ্রী মনোজ বিকাশ দেবরায় দাদা। সহজ-সরল ভাষায় বিভিন্ন ভক্তি সংমিশ্রনে জ্ঞান-গর্ব আলোচনা উপস্থাপন করেছেন, যা সত্যি ‘সনাতন দাস ও দীননাথ দাস-এঁর কর্মযোগ’ সুচারু রূপে প্রতিফলিত হয়েছে। তারপর দ্বিতীয় নিবন্ধটি লিখেছেন সিলেটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট ইজমার সাবেক সভাপতি, আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি আল-আজাদ ভাই। তিনি অতি দক্ষভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সনাতন দাস ও দীননাথ দাসের কর্মপরিধি। তাঁদের বিভিন্ন গুনাবলী সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করেছেন। আমি মনে করি এতে গ্রন্থের মান আরো বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয় নিবন্ধটি বর্ণনা করেছেন শতবর্ষী শ্রী মুকন্দ চন্দ্র দাস দাদা। যিনি একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, যিনি নিজ চোখে কাছ থেকে দেখেছেন সনাতন দাস ও দীননাথ দাস এর ন্যায়-নীতি পরায়ণ সাহসী কাজ গুলো। এর থেকে প্রমানিত হয় তাঁরা কত উঁচু মানের সমাজ সংস্কারক ছিলেন। যা আজ অকল্পনীয় ও বিরল। শ্রী মুকন্দ চন্দ্র দাস দাদার স্মরণ থেকে নিবন্ধ ‘সনাতন দাস ও দীননাম দাস আমার স্মরনে ও মননে’ অনুলিখন করে লেখকের দায়িত্ব পালন করেন দীননাথ দাসের গর্বিত প্রপৌত্র সম্ভাবনাময়ী লেখক ও গবেষক, কঠোর পরিশ্রমী সাহিত্য প্রেমিক শ্রীমান রত্নদীপ দাস রাজু। তিনি চমৎকারভাবে তা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন, এর জন্য তাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস জেনে সনাতন দাস ও দীননাথ দাস এঁর আদর্শের মত গড়ে উঠবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্তি করি।

তারপর চতুর্থ নিবন্ধটি লিখেছেন ‘পূর্বজদের স্মৃতি তর্পন’ শিরোনামে সনাতন দাস ও দীননাথ দাসের সুযোগ্য উত্তরসূরী দীননাথ দাসের পৌত্র মুক্তাহার গ্রামের আরেক আলোকিত ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীত শিল্পী, বহু গুণে গুনান্বিত স্বর্গীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র চন্দ্র দাস দাদা। তিনি তাঁর পরিবারের বিস্তারিত তথ্য সুন্দরভাবে বংশলতিকাসহ সন্নেবেশিত করেছেন যা পরবর্তী প্রজন্মগণ জেনে সমৃদ্ধ হবেন। আমি আশা প্রকাশ করি তাঁর রেখে যাওয়া সুযোগ্য উত্তরসুরীগণ এই মর্যাদাশীল পারিবারিক ঐতিহাস যত্নসহকারে সংগ্রহ করে রাখবেন অনাদিকাল পর্যন্ত। সব শেষ নিবন্ধটি লিখেছেন- ‘ইতিহাস কথা কয়, সনাতন-দীননাথ আপন-আলোয় উদ্ভাসিত’ শিরোনামে আলোচ্য গ্রন্থের সম্পাদক মহোদয় বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক ও গবেষক মতিয়ার চৌধুরী ভাই। তিনি তাঁর নিবন্ধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেছেন যা নতুন প্রজন্মের কাছে আজানা। সার্কেল ব্যবস্থাপনা ও তাদের আওতাভূক্ত এলাকা এলাকা ঘুরে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এই গ্রন্থে সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। এতে গ্রন্থটি বাহু জেনে সমৃদ্ধ লাভ করেছে বসে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। তারপর আছে নিবেদিত পঙক্তিমালা। শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস কে নিয়ে ছন্দ-তালে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন কবি, গল্পকার ও শিশু সাহিত্যিক শ্রী পৃথ্বীশ চক্রবর্তী। উনার সুন্দর তালে উপস্থাপনা সত্যি মনোমুগ্ধকর হয়েছে।

তারপর আছে শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস এঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী। আর এটি লিপিবদ্ধ করেছেন উক্ত বইয়ের সম্পাদনা পর্ষদ। এক ঝাঁক অভিজ্ঞ লেখক উক্ত গ্রন্থের সম্পাদনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস এঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী তাঁদের কর্মযজ্ঞ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করতে পেরেছেন। যা সত্যি প্রশাংসার দাবিদার। এরপর আছে পরিশিষ্ট-১, এতে স্থানীয় সরকারের সার্কেল পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ও সরপঞ্চ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন আলোচ্য গ্রন্থের সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক মতিয়ার চৌধুরী ভাই। তিনি সার্কেল পদ্ধতি সময়ে সময়ে পটপরিবর্তন, এর নানা কারন এবং বালাগঞ্জ থানার ২৬ নং সার্কেল পঞ্চায়েতের ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত একটি নিয়োগ পত্রের কপি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে এখানে তুলে ধরেছেন। যা গবেষকদের গবেষণা কাজে লাগবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এতে বইয়ের মান বহুগুনে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। এরপর তিনি সিলেট বিভাগের সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চদের সংক্ষিপ্ত তালিকা যুক্ত করেছেন। সেখানে সিলেট বিভাগের একশত বিশ জন সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চদের জীবনী স্থান পেয়েছে।তারপর আছে ছবিসহ লেখক পরিচিতি। সব শেষে আছে সম্পাদনা পর্ষদ, যাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল এই স্মারকগ্রন্থ

পরিশেষে আমি আশা প্রকাশ করি উক্ত গ্রন্থটি পাঠকদের মণিকোঠায় স্থান করে নিবে। আমি গ্রন্থটির বহুল প্রচার ও সাফল্য কামনা করছি।

লেখক: শেখর আচার্য্য; সাংবাদিক, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

Author

ট্যাগ :
জনপ্রিয় খবর

বড়লেখায় বিদ্যালয়ের গেট থেকে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

.copy_right_section { display: none; }

স্মারকগ্রন্থ ‘কালের অভিজ্ঞান’ ও প্রাসঙ্গিক কথা

আপডেটের সময়: ০৩:৩৭:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

ব্রিটিশ শাসনামলের বৃহত্তর শ্রীহট্ট/সিলেট জেলার (বর্তমান সিলেট বিভাগ) নবীগঞ্জ থানার ৩৯নং সার্কেল পঞ্চায়েতের সহোদর সরপঞ্চ ও এক কালের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস স্মারক গ্রন্থ ‘কালের অভিজ্ঞান’ নামক বইটি গত ২৪.০৭.২০২৫ খ্রি. তারিখে আমার হস্তগত হয়েছে। উদীয়মান লেখক ও গবেষক শ্রীমান রত্নদীপ দাস রাজু’র ইচ্ছাতে বইয়ের উপর কিছু লিখার আপ্রান চেস্টা করলাম।

এখন আসা যাক মূল বিষয়ে, ‘কালের অভিজ্ঞান’ স্মারকগ্রন্থ টি সাড়ে তিন ফর্মার যার মোট পৃষ্ঠা চাপ্পান্ন (৫৬)। উন্নত মানের অপসেট কাগজে সাদা-কালো মানসম্মত ছাঁপা। হার্ড কাগজে বাঁধাই কভার, উন্নতমানের কাগজে চার রঙ্গা প্রচ্ছদ ছাঁপা। যা বইয়ের মান অনেক যেন বাড়িয়েছে। প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে স্থানীয় সরকার সার্কেল পঞ্চায়েতের একটি গোলটেবিল সভার প্রতীকি চিত্র। ভিতরে প্রথম কভার পাতায় দেওয়া হয়েছে প্রকাশকের কথা, লিখেছেন প্রকাশক অসীম সরকার। আর বইটি প্রকাশ করা হয়েছে গাঙুড় প্রকাশন, সিলেট থেকে। মূল্য রাখা হয়েছে বাংলাদেশে দুইশত টাকা, ভারতে একশত চল্লিশ রুপি, যুক্তরাজ্যে দুই পাউন্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে দুই ডলার। বইটি লন্ডনে পাওয়া যাবে সিলেট রিসার্চ এন্ড ট্রান্সলেশন সেন্টার (স্টোর) লন্ডন, ই২৯ এম এইচ ইংল্যান্ড, ইউকেতে। বাংলাদেশে পাওয়া যাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাস গ্রন্থাগার, গ্রাম: মুক্তাহার, ডাক: নবীগঞ্জ-৩৩৭০, উপজেলা: নবীগঞ্জ, জেলা: হবিগঞ্জ।

গ্রন্থের প্রথমে দেওয়া হয়েছে Form of Sanad শিরোনামে ১৮৭০ সালের বঙ্গীয় ৬ আইনের ৩ ধরা মতে সনদের পাঠ শিরোনামে ঐতিহাসিক একটি প্রামাণ্য নিয়োগ পত্রের কপি তুলে ধরা হয়েছে। সূচীপত্রের পরে আছে ভূমিকা। আর ভূমিকা লিখেছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় ভূমিকা উপস্থাপন করেছেন যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। ইহাতে বইটির মান সমৃদ্ধ হয়েছে। এরপর আছে সম্পাদকীয় কলাম। এটি লিখেছেন বাংলাদেশ তথা আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিক, আমাদের সিলেটের গর্ব, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মতিয়ার চৌধুরী ভাই। তিনি সম্পাদকীয়তে তুলে ধরেছেন তাঁর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের কথা। ইতিহাসের গভীর হারিয়ে যাওয়া টুকরো টুকরো মানিক কষ্ট করে সংগ্রহের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, নতুন প্রজন্মের কাছে এক ঐতিহাসিক দলিল স্মারকগ্রন্থ ‘কালের অভিজ্ঞান’, যা সত্যি এক প্রশংসনীয় মহৎ কাজ।

তারপর দেওয়া হয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ মূল্যবান পাঁচজন লেখকের পাঁচটি নিবন্ধ। প্রথম নিবন্ধ লিখেছেন সিলেটের স্বনামধন্য বহু গ্রন্থের লেখক, পাঠক ও গবেষক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শ্রীচৈতন্য গবেষণা কেন্দ্রের সম্পাদক প্রকৌশলী শ্রী মনোজ বিকাশ দেবরায় দাদা। সহজ-সরল ভাষায় বিভিন্ন ভক্তি সংমিশ্রনে জ্ঞান-গর্ব আলোচনা উপস্থাপন করেছেন, যা সত্যি ‘সনাতন দাস ও দীননাথ দাস-এঁর কর্মযোগ’ সুচারু রূপে প্রতিফলিত হয়েছে। তারপর দ্বিতীয় নিবন্ধটি লিখেছেন সিলেটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট ইজমার সাবেক সভাপতি, আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি আল-আজাদ ভাই। তিনি অতি দক্ষভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সনাতন দাস ও দীননাথ দাসের কর্মপরিধি। তাঁদের বিভিন্ন গুনাবলী সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করেছেন। আমি মনে করি এতে গ্রন্থের মান আরো বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয় নিবন্ধটি বর্ণনা করেছেন শতবর্ষী শ্রী মুকন্দ চন্দ্র দাস দাদা। যিনি একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, যিনি নিজ চোখে কাছ থেকে দেখেছেন সনাতন দাস ও দীননাথ দাস এর ন্যায়-নীতি পরায়ণ সাহসী কাজ গুলো। এর থেকে প্রমানিত হয় তাঁরা কত উঁচু মানের সমাজ সংস্কারক ছিলেন। যা আজ অকল্পনীয় ও বিরল। শ্রী মুকন্দ চন্দ্র দাস দাদার স্মরণ থেকে নিবন্ধ ‘সনাতন দাস ও দীননাম দাস আমার স্মরনে ও মননে’ অনুলিখন করে লেখকের দায়িত্ব পালন করেন দীননাথ দাসের গর্বিত প্রপৌত্র সম্ভাবনাময়ী লেখক ও গবেষক, কঠোর পরিশ্রমী সাহিত্য প্রেমিক শ্রীমান রত্নদীপ দাস রাজু। তিনি চমৎকারভাবে তা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন, এর জন্য তাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস জেনে সনাতন দাস ও দীননাথ দাস এঁর আদর্শের মত গড়ে উঠবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্তি করি।

তারপর চতুর্থ নিবন্ধটি লিখেছেন ‘পূর্বজদের স্মৃতি তর্পন’ শিরোনামে সনাতন দাস ও দীননাথ দাসের সুযোগ্য উত্তরসূরী দীননাথ দাসের পৌত্র মুক্তাহার গ্রামের আরেক আলোকিত ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীত শিল্পী, বহু গুণে গুনান্বিত স্বর্গীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র চন্দ্র দাস দাদা। তিনি তাঁর পরিবারের বিস্তারিত তথ্য সুন্দরভাবে বংশলতিকাসহ সন্নেবেশিত করেছেন যা পরবর্তী প্রজন্মগণ জেনে সমৃদ্ধ হবেন। আমি আশা প্রকাশ করি তাঁর রেখে যাওয়া সুযোগ্য উত্তরসুরীগণ এই মর্যাদাশীল পারিবারিক ঐতিহাস যত্নসহকারে সংগ্রহ করে রাখবেন অনাদিকাল পর্যন্ত। সব শেষ নিবন্ধটি লিখেছেন- ‘ইতিহাস কথা কয়, সনাতন-দীননাথ আপন-আলোয় উদ্ভাসিত’ শিরোনামে আলোচ্য গ্রন্থের সম্পাদক মহোদয় বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক ও গবেষক মতিয়ার চৌধুরী ভাই। তিনি তাঁর নিবন্ধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেছেন যা নতুন প্রজন্মের কাছে আজানা। সার্কেল ব্যবস্থাপনা ও তাদের আওতাভূক্ত এলাকা এলাকা ঘুরে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এই গ্রন্থে সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। এতে গ্রন্থটি বাহু জেনে সমৃদ্ধ লাভ করেছে বসে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। তারপর আছে নিবেদিত পঙক্তিমালা। শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস কে নিয়ে ছন্দ-তালে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন কবি, গল্পকার ও শিশু সাহিত্যিক শ্রী পৃথ্বীশ চক্রবর্তী। উনার সুন্দর তালে উপস্থাপনা সত্যি মনোমুগ্ধকর হয়েছে।

তারপর আছে শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস এঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী। আর এটি লিপিবদ্ধ করেছেন উক্ত বইয়ের সম্পাদনা পর্ষদ। এক ঝাঁক অভিজ্ঞ লেখক উক্ত গ্রন্থের সম্পাদনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস এঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী তাঁদের কর্মযজ্ঞ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করতে পেরেছেন। যা সত্যি প্রশাংসার দাবিদার। এরপর আছে পরিশিষ্ট-১, এতে স্থানীয় সরকারের সার্কেল পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ও সরপঞ্চ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন আলোচ্য গ্রন্থের সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক মতিয়ার চৌধুরী ভাই। তিনি সার্কেল পদ্ধতি সময়ে সময়ে পটপরিবর্তন, এর নানা কারন এবং বালাগঞ্জ থানার ২৬ নং সার্কেল পঞ্চায়েতের ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত একটি নিয়োগ পত্রের কপি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে এখানে তুলে ধরেছেন। যা গবেষকদের গবেষণা কাজে লাগবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এতে বইয়ের মান বহুগুনে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। এরপর তিনি সিলেট বিভাগের সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চদের সংক্ষিপ্ত তালিকা যুক্ত করেছেন। সেখানে সিলেট বিভাগের একশত বিশ জন সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চদের জীবনী স্থান পেয়েছে।তারপর আছে ছবিসহ লেখক পরিচিতি। সব শেষে আছে সম্পাদনা পর্ষদ, যাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল এই স্মারকগ্রন্থ

পরিশেষে আমি আশা প্রকাশ করি উক্ত গ্রন্থটি পাঠকদের মণিকোঠায় স্থান করে নিবে। আমি গ্রন্থটির বহুল প্রচার ও সাফল্য কামনা করছি।

লেখক: শেখর আচার্য্য; সাংবাদিক, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

Author