Dhaka ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজারের প্রাথমিক শিক্ষা চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন

শিক্ষার মূলভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। যদিও শিশুরা অ আ, ১ ২, ক খ পরিবারেই শিখে, সেটার মূল ভিত্তি মজবুত করা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ক্লাস নিয়েছেন কয়েক বছর। তবে এরপর হঠাৎ অনুপস্থিত। বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারে। সম্প্রতি চাকরি না ছেড়ে এভাবে বিদেশে যাওয়ার অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ৪৮ জনকে। এছাড়া চাকরি না ছেড়ে বিদেশে পলায়ন, কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও অসদাচরণের অভিযোগ আরো ৩৬জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। এতে শিক্ষক-সংকটে ভুগছে জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।
সূত্রে জানা যায়, এমন অনেক বিদ্যালয় আছে, যেখানে শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীর অনুপাত কম।এখানে মানা হয়না সরকারি কোন নিয়ম কানুন। শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে আসেন বিদ্যালয়ে, ছুটিও দেন ইচ্ছেমতো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক সময়মতো স্কুলে উপস্থিত না থাকা এর ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কাঠামো ব্যাপক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনভাবেই নজর রাখছে না বলে এমনটাই বলেছেন স্থানীয় এলাকাবাসীরা।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই ৪৮ জন সহকারী শিক্ষককে পলায়নের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে পলায়ন ও অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, যাঁরা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, তাঁদের বড় অংশ নারী।
সূত্র জানিয়েছে,২০২৩ সাল থেকে বিভিন্নভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের। শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রথমে ছুটি নেন। পরে তাঁরা বিদেশে চলে যান। তখন সরকারিভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। যত দিন যাচ্ছে, এই সংখ্যা তত বেড়ে চলছে।
একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আগনসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্যামলী খানম, মৌলভীবাজার সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাহমিদা ইসলাম, কমলগঞ্জের কাউয়ারগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমরজিৎ স্বর্ণকার, সতিঝিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নোভা নাওয়ার এবং রাজনগর উপজেলার চাটুরা সরকারি প্রামিক বিদ্যালয়ের কাবেরী রানী দেব।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানান, শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রথমে ছুটি নেন। পরে তারা বিদেশে চলে যান।
জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা বলেন,দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, এই সংখ্যা তত বেড়ে চলছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যোগদান করার পর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৯ জনকে পলায়নের অভিযোগে বরখাস্ত করেছি। এ ছাড়া চারজনকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৮ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষক ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। যাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাঁরা আর চাকরিতে ফিরতে পারবেন না।

Author

ট্যাগ :
জনপ্রিয় খবর
.copy_right_section { display: none; }

মৌলভীবাজারের প্রাথমিক শিক্ষা চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন

আপডেটের সময়: ১১:৫১:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

শিক্ষার মূলভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। যদিও শিশুরা অ আ, ১ ২, ক খ পরিবারেই শিখে, সেটার মূল ভিত্তি মজবুত করা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ক্লাস নিয়েছেন কয়েক বছর। তবে এরপর হঠাৎ অনুপস্থিত। বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারে। সম্প্রতি চাকরি না ছেড়ে এভাবে বিদেশে যাওয়ার অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ৪৮ জনকে। এছাড়া চাকরি না ছেড়ে বিদেশে পলায়ন, কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও অসদাচরণের অভিযোগ আরো ৩৬জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। এতে শিক্ষক-সংকটে ভুগছে জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।
সূত্রে জানা যায়, এমন অনেক বিদ্যালয় আছে, যেখানে শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীর অনুপাত কম।এখানে মানা হয়না সরকারি কোন নিয়ম কানুন। শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে আসেন বিদ্যালয়ে, ছুটিও দেন ইচ্ছেমতো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক সময়মতো স্কুলে উপস্থিত না থাকা এর ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কাঠামো ব্যাপক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনভাবেই নজর রাখছে না বলে এমনটাই বলেছেন স্থানীয় এলাকাবাসীরা।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই ৪৮ জন সহকারী শিক্ষককে পলায়নের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে পলায়ন ও অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, যাঁরা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, তাঁদের বড় অংশ নারী।
সূত্র জানিয়েছে,২০২৩ সাল থেকে বিভিন্নভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের। শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রথমে ছুটি নেন। পরে তাঁরা বিদেশে চলে যান। তখন সরকারিভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। যত দিন যাচ্ছে, এই সংখ্যা তত বেড়ে চলছে।
একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আগনসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্যামলী খানম, মৌলভীবাজার সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাহমিদা ইসলাম, কমলগঞ্জের কাউয়ারগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমরজিৎ স্বর্ণকার, সতিঝিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নোভা নাওয়ার এবং রাজনগর উপজেলার চাটুরা সরকারি প্রামিক বিদ্যালয়ের কাবেরী রানী দেব।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানান, শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রথমে ছুটি নেন। পরে তারা বিদেশে চলে যান।
জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা বলেন,দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, এই সংখ্যা তত বেড়ে চলছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যোগদান করার পর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৯ জনকে পলায়নের অভিযোগে বরখাস্ত করেছি। এ ছাড়া চারজনকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৮ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষক ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। যাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাঁরা আর চাকরিতে ফিরতে পারবেন না।

Author