Dhaka ০৮:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নবীগঞ্জে উচ্ছৃঙ্খল এমদাদ: সাংবাদিককে মবের হুমকি

নবীগঞ্জে এক যুবক প্রকাশ্যে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক এম.এ আহমদ আজাদকে মব দিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়ারও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। এমদাদুল হক এমদাদ নামের ওই যুবক আজাদের ছবি এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেয়ায় এলাকায় চরম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এমদাদ নিজেকে ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি দাবি করলেও উপজেলা ছাত্রদলের দায়িত্বশীল নেতারা নিশ্চিত করেছেন- সে বর্তমানে কোন কমিটির সাথেই সম্পৃক্ত নয়। ভুয়া পদবী ব্যবহার করে সে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপকর্ম, চাঁদাবাজি ও মানুষদের হয়রানি করে আসছে। তার বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং সেনা ক্যাম্পে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ারও খবর পাওয়া গিয়েছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে এমদাদ নিজের গ্রামে ‘বাবা কর্তৃক মেয়ে ধর্ষণ’ নাটক সাজিয়ে পুলিশের ৯৯৯ এ ফোন করে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি এম.এ আহমদ আজাদসহ তিনজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান।

পরে সত্যতা যাচাইয়ে জানা যায়, ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ সাজানো। এ সময় এমদাদ ও তার সহযোগীরা সাংবাদিকদের ওপর উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং আজাদের মোটরসাইকেলের লক ভেঙে সাইকেল ও একটি হেলমেট লুট করে নিয়ে যায়। পরে পুলিশের সহায়তায় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হলেও হেলমেট ফেরত দেয়নি এমদাদ গং।

এরপর থেকেই সাংবাদিক আজাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মিথ্যা অপপ্রচার, এডিট করা ছবি পোস্ট ও মব দিয়ে হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এমদাদ।

ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, এমদাদ নিয়মিত চাঁদা দাবি করে সাধারণ মানুষকে হুমকি দিয়ে আসছে। এক লন্ডন প্রবাসী নেছাওর মিয়ার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে ব্যর্থ হলে বিষয়টি সেনা ক্যাম্পে গড়ায়। এছাড়া স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলামের কাছেও চাঁদা দাবি ও গালাগালির অভিযোগ রয়েছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, আমি নিরীহ মানুষ। আমাকে মারার হুমকি দিয়েছে, বলে বাড়াবাড়ি করলে পা ভেঙে দেবে। থানায় অভিযোগ করেছি, কিন্তু তার ভয়ে কেউ সাক্ষ্য দিতে চায় না।

এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রদলের এক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, এমদাদ কোনো কমিটির অংশ নয়। সে ভুয়া পরিচয়ে নিজেকে সভাপতি দাবি করে অনৈতিক কাজ করছে। একজন সাংবাদিককে মব দিয়ে হুমকি দেওয়া ঘৃণিত কাজ। আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই।

৩০ বছরের অভিজ্ঞ সাংবাদিক এম.এ আহমদ আজাদ বলেন, আমি কোন রাজনৈতিক দলের পদে নেই। ভুয়া তথ্য দিয়ে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। ছবি এডিট করে যেকোনো কিছু বানানো যায়। তার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেব।

নবীগঞ্জ থানার এসআই সুমন মিয়া বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। ধর্ষণের সাজানো ঘটনার কোনো সত্যতা মেলেনি। সাংবাদিকের মোটরসাইকেল কাগজপত্র যাচাই শেষে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামরুজ্জামান বলেন, এখনো কোনো অভিযোগ পাই নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, এমদাদুল হক এমদাদ ভুয়া রাজনৈতিক পরিচয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে- এমন অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। সাংবাদিককে প্রকাশ্যে মব দিয়ে হামলার হুমকি শুধু সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর আঘাত নয়, আইনশৃঙ্খলার জন্যও বড় হুমকি। স্থানীয়রা প্রশাসন ও ছাত্রদলকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Author

ট্যাগ :
জনপ্রিয় খবর
.copy_right_section { display: none; }

নবীগঞ্জে উচ্ছৃঙ্খল এমদাদ: সাংবাদিককে মবের হুমকি

আপডেটের সময়: ০৯:২৭:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নবীগঞ্জে এক যুবক প্রকাশ্যে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক এম.এ আহমদ আজাদকে মব দিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়ারও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। এমদাদুল হক এমদাদ নামের ওই যুবক আজাদের ছবি এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেয়ায় এলাকায় চরম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এমদাদ নিজেকে ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি দাবি করলেও উপজেলা ছাত্রদলের দায়িত্বশীল নেতারা নিশ্চিত করেছেন- সে বর্তমানে কোন কমিটির সাথেই সম্পৃক্ত নয়। ভুয়া পদবী ব্যবহার করে সে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপকর্ম, চাঁদাবাজি ও মানুষদের হয়রানি করে আসছে। তার বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং সেনা ক্যাম্পে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ারও খবর পাওয়া গিয়েছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে এমদাদ নিজের গ্রামে ‘বাবা কর্তৃক মেয়ে ধর্ষণ’ নাটক সাজিয়ে পুলিশের ৯৯৯ এ ফোন করে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি এম.এ আহমদ আজাদসহ তিনজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান।

পরে সত্যতা যাচাইয়ে জানা যায়, ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ সাজানো। এ সময় এমদাদ ও তার সহযোগীরা সাংবাদিকদের ওপর উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং আজাদের মোটরসাইকেলের লক ভেঙে সাইকেল ও একটি হেলমেট লুট করে নিয়ে যায়। পরে পুলিশের সহায়তায় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হলেও হেলমেট ফেরত দেয়নি এমদাদ গং।

এরপর থেকেই সাংবাদিক আজাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মিথ্যা অপপ্রচার, এডিট করা ছবি পোস্ট ও মব দিয়ে হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এমদাদ।

ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, এমদাদ নিয়মিত চাঁদা দাবি করে সাধারণ মানুষকে হুমকি দিয়ে আসছে। এক লন্ডন প্রবাসী নেছাওর মিয়ার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে ব্যর্থ হলে বিষয়টি সেনা ক্যাম্পে গড়ায়। এছাড়া স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলামের কাছেও চাঁদা দাবি ও গালাগালির অভিযোগ রয়েছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, আমি নিরীহ মানুষ। আমাকে মারার হুমকি দিয়েছে, বলে বাড়াবাড়ি করলে পা ভেঙে দেবে। থানায় অভিযোগ করেছি, কিন্তু তার ভয়ে কেউ সাক্ষ্য দিতে চায় না।

এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রদলের এক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, এমদাদ কোনো কমিটির অংশ নয়। সে ভুয়া পরিচয়ে নিজেকে সভাপতি দাবি করে অনৈতিক কাজ করছে। একজন সাংবাদিককে মব দিয়ে হুমকি দেওয়া ঘৃণিত কাজ। আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই।

৩০ বছরের অভিজ্ঞ সাংবাদিক এম.এ আহমদ আজাদ বলেন, আমি কোন রাজনৈতিক দলের পদে নেই। ভুয়া তথ্য দিয়ে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। ছবি এডিট করে যেকোনো কিছু বানানো যায়। তার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেব।

নবীগঞ্জ থানার এসআই সুমন মিয়া বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। ধর্ষণের সাজানো ঘটনার কোনো সত্যতা মেলেনি। সাংবাদিকের মোটরসাইকেল কাগজপত্র যাচাই শেষে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামরুজ্জামান বলেন, এখনো কোনো অভিযোগ পাই নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, এমদাদুল হক এমদাদ ভুয়া রাজনৈতিক পরিচয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে- এমন অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। সাংবাদিককে প্রকাশ্যে মব দিয়ে হামলার হুমকি শুধু সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর আঘাত নয়, আইনশৃঙ্খলার জন্যও বড় হুমকি। স্থানীয়রা প্রশাসন ও ছাত্রদলকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Author