Dhaka ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস ও কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক বাতিলের দাবি

ডেস্ক রিপোর্ট : বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং তামাক নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক চুক্তির আর্টিকেল ৫.৩ লঙ্ঘন করে তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের গুরুত্ব: চিকিৎসকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এই দাবি জানানো হয়।

সেমিনারে বক্তারা জানান, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির কোনও মতামত নেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি-এর আর্টিকেল ৫.৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন এবং দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই সরকারকে অবিলম্বে স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুমোদনের আহ্বান জানানো হয়।

সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন এবং আরও ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। একইসঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন আর বিলম্ব করা মানে জনস্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করা।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এফসিটি-এর প্রকাশ্য লঙ্ঘন। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, সরকার যেন দ্রুত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধনী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করে।

সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যানসার হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু রোধে আইন সংশোধনে বিলম্ব অগ্রহণযোগ্য এবং এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এফসিটিসি-র প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েও বর্তমানে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা জনস্বার্থবিরোধী। তামাক কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা, জনস্বাস্থ্য নয়। তাই এদের কোনও মতামত গ্রহণ করা মানেই জনস্বার্থকে উপেক্ষা করা।

অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজীবন তামাকের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন, ধূমপায়ীদের চাকরির জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তিনি আশ্বাস দেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অতীতের মতো ভবিষ্যতেও তামাক নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করবে, এবং নিজেও এখন থেকে সক্রিয়ভাবে তামাকবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকবেন।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন— গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজের অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. খোরশেদ আলম, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাঈদ-উজ-জামান, অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, অধ্যাপক আকরাম হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশনস অফিসার আবু জাফরসহ বিভিন্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

Author

ট্যাগ :
জনপ্রিয় খবর

বড়লেখায় বিদ্যালয়ের গেট থেকে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

.copy_right_section { display: none; }

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস ও কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক বাতিলের দাবি

আপডেটের সময়: ০৩:৩৩:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট : বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং তামাক নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক চুক্তির আর্টিকেল ৫.৩ লঙ্ঘন করে তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের গুরুত্ব: চিকিৎসকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এই দাবি জানানো হয়।

সেমিনারে বক্তারা জানান, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির কোনও মতামত নেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি-এর আর্টিকেল ৫.৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন এবং দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই সরকারকে অবিলম্বে স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুমোদনের আহ্বান জানানো হয়।

সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন এবং আরও ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। একইসঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন আর বিলম্ব করা মানে জনস্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করা।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এফসিটি-এর প্রকাশ্য লঙ্ঘন। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, সরকার যেন দ্রুত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধনী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করে।

সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যানসার হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু রোধে আইন সংশোধনে বিলম্ব অগ্রহণযোগ্য এবং এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এফসিটিসি-র প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েও বর্তমানে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা জনস্বার্থবিরোধী। তামাক কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা, জনস্বাস্থ্য নয়। তাই এদের কোনও মতামত গ্রহণ করা মানেই জনস্বার্থকে উপেক্ষা করা।

অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজীবন তামাকের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন, ধূমপায়ীদের চাকরির জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তিনি আশ্বাস দেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অতীতের মতো ভবিষ্যতেও তামাক নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করবে, এবং নিজেও এখন থেকে সক্রিয়ভাবে তামাকবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকবেন।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন— গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজের অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. খোরশেদ আলম, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাঈদ-উজ-জামান, অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, অধ্যাপক আকরাম হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশনস অফিসার আবু জাফরসহ বিভিন্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

Author